Logo

ডায়াবেটিস সম্পর্কে ৯টি সাধারণ ভুল ধারণা

  • 27 মে, 2025

ডায়াবেটিস সম্পর্কে সাধারণ ভুল ধারণা

bb-বেবহাৱาน-scaled

"ডায়াবেটিস" হল একটি দীর্ঘস্থায়ী অ-সংক্রামক রোগ (NCD), যা বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে এবং এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তবে, অনেকেই ডায়াবেটিস সম্পর্কে **ভুল ধারণা** পোষণ করেন, যা অজান্তেই তাদের রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। চলুন, ডায়াবেটিস সম্পর্কে সাধারণ ভুল ধারণাগুলো জেনে নেওয়া যাক।


1. ডায়াবেটিস কি শুধুমাত্র বয়স্কদের রোগ?

ডায়াবেটিস শুধুমাত্র বয়স্কদের রোগ নয়। এটি বয়স নির্বিশেষে যে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে, কারণ এবং অন্যান্য ঝুঁকির কারণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, **টাইপ 1 ডায়াবেটিস** প্রায়শই শিশু বা তরুণদের মধ্যে দেখা যায়, যখন **টাইপ 2 ডায়াবেটিস** মধ্যবয়সী থেকে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি সাধারণ। তবে, বর্তমানে তরুণদের মধ্যেও টাইপ 2 ডায়াবেটিস নির্ণয় হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।


2. পাতলা মানুষের কি ডায়াবেটিস হয় না?

কেউ কেউ মনে করেন যে স্থূলকায় না হলে ডায়াবেটিস হয় না। বাস্তবে, স্থূলকায় এবং পাতলা উভয় ব্যক্তিরই ডায়াবেটিস হতে পারে। স্থূলকায় ব্যক্তিদের **ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা** বেশি থাকার কারণে তাদের ঝুঁকি বেশি থাকে, কিন্তু পাতলা ব্যক্তি যাদের অন্যান্য ঝুঁকির কারণ (যেমন, জেনেটিক প্রবণতা বা টাইপ 1 ডায়াবেটিস, যেখানে অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না) রয়েছে, তারাও সমান ঝুঁকিতে থাকেন।


3. যদি পরিবারের কারও ডায়াবেটিস না থাকে, তাহলে কি আমার হবে না?

যদিও জেনেটিক্স ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে প্রভাব ফেলে, এর অর্থ এই নয় যে যাদের পারিবারিক ইতিহাস নেই তারা সুরক্ষিত। ডায়াবেটিস একাধিক কারণে হতে পারে: উচ্চ চিনি/উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার, ব্যায়ামের অভাব, চাপ বা অগ্ন্যাশয়ের ত্রুটি। **শুধুমাত্র জেনেটিক্স ডায়াবেটিস নির্ধারণ করে না**।


4. ফল থেকে প্রাপ্ত চিনি খেলে কি ডায়াবেটিস হয় না?

ফল থেকে প্রাপ্ত চিনি (ফ্রুক্টোজ) এখনও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। উচ্চ ফ্রুক্টোজযুক্ত ফল বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে ফ্রুক্টোজ গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। **কম চিনিযুক্ত ফল** যেমন ড্রাগন ফল, পেয়ারা বা গোলাপজাম পরিমিত পরিমাণে বেছে নিন।


5. শুধুমাত্র মিষ্টি খেলেই কি ডায়াবেটিস হয়?

ডায়াবেটিস শুধুমাত্র মিষ্টি খাবারের কারণে হয় না। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট (ভাত, ময়দা) বা চর্বি গ্রহণ করলেও রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে, যা স্থূলতা, ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।


6. ডায়াবেটিসের ওষুধ কি কিডনির ক্ষতি দ্রুত করে?

কিছু রোগী ডায়াবেটিসের ওষুধ এড়িয়ে চলেন, ভুল করে বিশ্বাস করেন যে এগুলো কিডনির ক্ষতি করে। বাস্তবে, **উচ্চ রক্তে শর্করা** কিডনির ক্ষতি করে, কারণ এটি বর্জ্য ফিল্টার করার জন্য কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে, যার ফলে কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়। সঠিক চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে নির্ধারিত ওষুধগুলো **রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ** করতে এবং কিডনির ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।


7. ইনসুলিন কি শুধুমাত্র গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য?

ডাক্তাররা রোগীর ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী ইনসুলিন দেন, শুধুমাত্র রোগের তীব্রতা অনুযায়ী নয়। উদাহরণস্বরূপ:

  • **টাইপ 1 ডায়াবেটিস** (ইনসুলিন উৎপাদন হয় না)।
  • দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের রোগী যারা মৌখিক ঔষধ গ্রহণ করতে পারেন না।
  • অন্যান্য চিকিৎসা সত্ত্বেও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন থাকলে।

8. ভেষজ ঔষধ কি ডায়াবেটিস নিরাময় করতে পারে?

যদিও কিছু ভেষজ রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করতে পারে, তবে বেশিরভাগের দীর্ঘমেয়াদী মানব গবেষণায় প্রমাণিত নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নেই। অনিয়ন্ত্রিত ভেষজ ব্যবহারে অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। **আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি** সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর বিকল্প হিসেবে রয়ে গেছে।


9. ডায়াবেটিস রোগীরা কি রক্তদান করতে পারেন না?

ডায়াবেটিস রোগীরা **রক্তদান করতে পারেন** যদি তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক থাকে এবং তাদের কোনো জটিলতা না থাকে।

More Events